১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস

ডি এম রেজা চৌধুরী রিপন:  আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নয় মাসের যুদ্ধ শেষে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করেছিল পাকহানাদার বাহিনী। এই চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি পেয়েছিলো স্বাধীন এক রাষ্ট্র,যার নাম "বাংলাদেশ"। বিজয়ের অনুভূতি সবসময়ই, সবার জন্যই আনন্দের হয়ে থাকে। কিন্তু এই বিজয় বাঙালি জাতির জন্য যেমনি আনন্দের ঠিক তেমনি বেদনারও, বিশেষ করে যারা স্বজন হারিয়েছিলেন তাদের জন্য। অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের ফসল হচ্ছে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ। এই দিনে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের এবং যেসব নারী ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তাদের। রক্তনদী পেরিয়ে আসা আনন্দ-বেদনায় মিশ্র হচ্ছে আমাদের আজকের এই মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে এই দিনে প্রভাতী সূর্যের আলোয় রঙ্গিন হয়ে উঠেছিল শস্য-শ্যামলা, শিশির ভেজা বাংলার মাটি, অবসান হয়েছিল পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর সাড়ে তেইশ বছরের নির্বিচার শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতনের কালো অধ্যায়। নয় মাসের জঠর-যন্ত্রণা শেষে এদিনে জন্ম নেয় একটি নতুন দেশ স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল বুকে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে। ৪৭ বছরের এ পথপরিক্রমায় সে স্বপ্নের কতটা পূরণ হয়েছে ?  তবে এর মধ্যে আমাদের অনেক চড়াই-উতরাই মোকাবেলা করতে হয়েছে এটাও চরম সত্য। রাজনীতি এগিয়েছে অমসৃণ পথে।  গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায়! আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হতে পারেনি আজও। গণতন্ত্রকে সর্বস্তরে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকারের অভাব পীড়াদায়ক।

 রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর বিভক্তি, এর পাশাপাশি জাতীয় প্রশ্নে অনৈক্য আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বড় বাধা হয়ে রয়েছে। দেশে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এখনও তৎপর ! মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের পেছনে কাজ করেছিল মত-পথ-জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ। এ জন্যই সম্ভব হয়েছিল আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত শক্তিশালী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে মাত্র নয় মাসে পরাজিত করা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাধীনতার পর আমরা সেই ঐক্য ধরে রাখতে পারিনি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও রাজনৈতিক বিভক্তি দেশে গণতন্ত্রের ভিত সুদৃঢ় করার পথে বড় অন্তরায় হয়ে রয়েছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের নেতৃত্বকে। সেই সঙ্গে জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোয় অভিন্ন নীতি অনুসরণ অপরিহার্য। আমাদের সামনে সম্ভাবনা অসীম। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সব সমস্যা মোকাবেলায় সচেষ্ট হলে আমাদের অগ্রগতি ঘটবে দ্রুত। বিভেদ ভুলে আমরা সে পথেই অগ্রসর হব- এই হোক বিজয় দিবসের অঙ্গীকার।

( আমার এই লেখাটি somoynews24.com এ প্রকাশিত হয়: ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ইং তারিখ রোজ রবিবার, http://somoynews24.com/home/14245/)


 

Post a Comment

0 Comments